রাসুল (সা:) এর এমন ৪ টি গুণ, যা আমরা খুব সহজেই অনুসরণ করতে পারি

4 best quality of muhammad (s), রাসুল (ﷺ)-এর এমন ৪ টি গুণ, যা আমরা খুব সহজেই অনুসরণ করতে পারি

The best 4 beautiful manners of Prophet Muhammad (PBUH) in Bangla.

 এখানে রাসুল (ﷺ)-এর এমন ৪ টি গুণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যা সত্যিই আমরা খুব সহজেই অনুসরণ করতে পারি। আল্লাহ যেন আমাদের সকলেরই সেই তাওফিক দান করেন, আমীন।

রাসুল (ﷺ) কিভাবে কথা বলতেন?

১। আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের ন্যায় অবিরাম এবং তাড়াতাড়ি কথা বলতেন না। বরং ধীরে ধীরে স্পষ্টভাবে কথা বলতেন। ফলে একটি বিষয় অপর বিষয় থেকে পৃথক হয়ে যেত এবং শ্রোতারা খুব ভালোভাবে তাঁর কথা উপলব্ধি করতে পারত। – সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, জামে তিরমিযি

২। আনাস (রা) বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুরুত্বপূর্ণ কথা তিনবার বলতেন। যাতে শ্রোতাদের বুঝতে সহজ হয়। -সহিহ বুখারি, জামে তিরমিযি

৩। হাসান (রা) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিনা প্রয়োজনে কথা বলতেন না। তিনি বক্তব্যর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পূর্ণ মুখে কথা বলতেন। (অর্থাৎ কথা বলার সময় কেবল ঠোঁট ব্যবহার করতেন না এবং চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলতেন না। বরং স্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলতেন)।

তিনি অল্প কথা বলতেন, কিন্তু তা হতো ব্যাপক অর্থবহুল (হাদিসে এখানে جوامع الكلم শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ অল্প কথায় অনেক বেশি মর্ম বুঝানো), তাঁর কথা একটি আরেকটি থেকে পৃথক হতো। তাতে অপ্রয়োজনীয় বিষয় স্থান পেত না, আবার প্রয়োজনের চেয়ে কমও হতো না। তিনি কর্কশভাষী ছিলেন না, কাউকে হেয় বা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলতেন না। – জামে তিরমিযি

রাসুল (ﷺ) কিভাবে হাসতেন?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় মুচকি হাসতেন। সাধারণত তিনি কখনও অট্টহাসি দিতেন না। তবে মাঝে মাঝে হাসার সময় তাঁর দাঁত মোবারক প্রকাশ পেত।

১। আব্দুল্লাহ বিন হারেস (রা) বর্ণনা করেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হাসি সাধারণত মুচকি হাসির পর্যায়ে হতো। -মুসনাদে আহমাদ, জামে তিরমিযি

২। জারির (রা) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ইসলাম গ্রহণের পর থেকে কখনও আমাকে তাঁর মজলিসে প্রবেশ করতে বাঁধা দেননি। আর যখনই আমাকে দেখতেন, তখনই হাসতেন। -সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, জামে তিরমিযি

৩। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি ওই ব্যক্তি সম্পর্কে অবগত আছি, যাকে সর্বশেষ জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। সে হামাগুড়ি দিয়ে জাহান্নাম থেকে বের হবে। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর আদেশ দেয়া হবে। সেখানে গিয়ে সে দেখবে, সবাই স্ব স্ব স্থান দখল করে আছে। হতাশ হয়ে সেখান থেকে ফিরে এসে বলবে- হে আল্লাহ ! মানুষ তো সব স্থান দখন করে নিয়েছে। তখন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বলা হবে, তোমার কি দুনিয়ার ঘরবাড়ির কথা মনে আছে? সে বলবে, হে আল্লাহ ! হ্যাঁ, আমার তা মনে আছে। তখন বলা হবে, তোমার যা ইচ্ছে, তা তুমি চাইতে থাক। সে তখন চাওয়া শুরু করবে।
তারপর ঘোষণা করা হবে, তুমি যা আকাঙ্ক্ষা করেছ সেগুলো এবং তার সাথে দুনিয়ার দশ গুন জান্নাত তোমাকে দেওয়া হলো। সে বলবে, হে আল্লাহ ! আপনি জগতের বাদশাহ হয়েও আমার সাথে ঠাট্টা করছেন!
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, আমি দেখতে পেলাম রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ কথা বলার সময় হেসে দিলেন। এমনকি সে সময় তাঁর দাঁত মোবারকও দেখা যাচ্ছিল। -সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, জামে তিরমিযি

রাসুল (ﷺ) কিভাবে রসিকতা করতেন?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কৌতুক করতেন, মজা করতেন। কিন্তু সেই হাস্যরসে কোনো উপহাস বা মিথ্যে থাকতো না। থাকতো না কোনো ঠাট্টা বিদ্রূপ বা তুচ্ছতাচ্ছিল্য। তাঁর সেই রসিকতার মাঝেও থাকতো শিক্ষণীয় কিছু।

১। আনাস ইবনে মালিক (রা) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি একবার তাঁর কাছে একটি উট চাইলে তিনি বলেন, “আমি তোমাকে একটা উটের বাচ্চা দেব।” সে ব্যক্তি বললেন, “উটের বাচ্চা দিয়ে আমি কি করবো?” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “উট কি উটের বাচ্চা নয়?” – সুনানে আবি দাউদ,জামে তিরমিযি,মুসনাদে আহমাদ

২। আনাস ইবনে মালিক (রা) বর্ণনা করেন, জাহির নামে এক ব্যক্তি ছিল যাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব পছন্দ করতেন। জাহির একবার বাজারে পণ্য বিক্রি করছিল আর বলছিল “এটা কে কিনবেন? এটা কে কিনবেন?” এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেছন থেকে তাঁকে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরলেন যে, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পাচ্ছিলেন না। তিনি বলতে লাগলেন, কে, কে ! ছাড়, আমাকে ছাড়! কিছুক্ষণ পর একটু তাকিয়ে যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেলেন, তখন উল্টো গভীর ভালবাসায় রাসুলের শরীরের সাথে নিজেকে আরও মিলিয়ে নিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মজা করে বলতে লাগলেন, “এই দাস কে কিনবেন? এই দাসকে কে কিনবেন?” জাহির বললেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমাকে বিক্রি করলে আপনি তো বেশি মূল্য পাবেন না।” রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তুমি আল্লাহর দাস এবং আল্লাহর কাছে তুমি অনেক মূল্যবান”। – জামে তিরমিযি, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে হিব্বান, তাবরানী

৩। আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন, সাহাবীগন একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেন “হে আল্লাহর রাসূল! আপনিও আমাদের সাথে কৌতুক করেন?” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দেন, “হ্যাঁ, তবে আমি সত্য বিনা বলি না”। – জামে তিরমিযি

রাসুল (ﷺ) কিভাবে হাঁটতেন?

১। হাসান (রা) বর্ননা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হাঁটতেন, তখন দৃঢ়ভাবে পা উঠাতেন (ছ্যাঁচড়িয়ে হাঁটতেন না) এবং সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে হাঁটতেন। নম্রভাবে এবং দ্রুত চলতেন। তাঁর পদক্ষেপ ছিল বড় বড়। তিনি যখন হাঁটতেন মনে হতো, কোনো উঁচু স্থান থেকে নিচের দিকে নামছেন। যখন কারো সাথে কথা বলতেন, তখন তার দিকে সম্পূর্ণ ফিরে কথা বলতেন। তাঁর দৃষ্টি অধিকাংশ সময় নিচের দিকে থাকতো। চলার সময় সাহাবীদেরকে সামনে রেখে নিজে পেছনে চলতেন। কারো সাথে সাক্ষাৎ হলে, তিনিই আগে সালাম দিতেন। – জামে তিরমিযি

সূত্র: এই পোস্টটি আমার স্পন্দন ব্লগ থেকে কপি করা হয়েছে এবং আমি কিছুটা এডিট করেছি।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

রাসুল (সা:) এর ধৈর্য ও সহনশীলতার ২ টি অসাধারণ উদাহরণ

Best Bangla Islamic Apps: দোআ ও যিকির (হিসনুল মুসলিম)

Best Bangla Islamic Apps: অর্থপূর্ণ নামায (সালাত) শব্দসহ